Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, বুধবার, জুলাই ৯, ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

কুমিল্লা বিভাগ

কুমিল্লায় করোনা ভাইরাস সতর্কতায় অবহেলা, নষ্ট হচ্ছে শত কোটি টাকার সরঞ্জাম

ডেস্ক রিপোর্ট:
২৬ দিন আগে বুধবার, জুলাই ৯, ২০২৫
# ফাইল ফটো




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সতর্কতা জোরদার হলেও কুমিল্লায় এর প্রতিরোধে কোনো কার্যকর প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে একাধিকবার জানানো সত্ত্বেও মাঠ পর্যায়ে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।


বর্তমানে কুমিল্লায় করোনা পরীক্ষার কিটের অভাব রয়েছে, টিকাদান কর্মসূচিও স্থগিত। এদিকে, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

ও কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে কোটি কোটি টাকার সরঞ্জাম অচল অবস্থায় পড়ে আছে।


২০২০ সালের জুন মাসে ইমারজেন্সি রেসপন্স এন্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে দুটি বিশেষ আইসিইউ ইউনিট চালু করা হয়। তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।


বর্তমানে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের ৩০টি আইসিইউ বেডের মধ্যে মাত্র দুটিতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। বাকি ২৮টি বেড ব্যবহারের অনুপযোগী। একই অবস্থা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও—৩০টি বেডের মধ্যে মাত্র ১০টি সচল রয়েছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কয়েক মাস ধরে কোনো বেতনভাতা পাচ্ছেন না। ফলে অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন।


যারা এখনো আছেন, তারা সীমিত জনবল নিয়ে কোনো রকমে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে কোটি কোটি টাকার জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।


এর আগে করোনার ভয়াবহতার সময় কুমিল্লায় সাড়ে চার হাজার রোগী আইসিইউ সেবা নেন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৮০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। সেই সময় জীবনবাজি রেখে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসক ও নার্সরা এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছেন।


কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউ ইউনিটের ইনচার্জ ডা. আবদুল মুকতাদির জানান, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় জনবল সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র একজন চিকিৎসক ও চারজন নার্স দিয়ে চলছে একটি ইউনিটের কার্যক্রম। এতে রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।


কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাইন উদ্দিন মিয়াজী জানান, আমরা যারা এখনো কাজ করছি, তারা শুধুমাত্র দায়িত্ববোধ থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারি সিদ্ধান্ত না এলে এই সেবা চালু রাখা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, আমরা চাই নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে আবারও জনবল ফিরিয়ে আনা হোক। করোনার সময় আমরা যেভাবে জীবন বাজি রেখে কাজ করেছি, সেই মূল্য যেন অন্তত স্বীকৃতি পায়।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানায়, সরকারি হাসপাতালে একজন রোগীর আইসিইউতে চিকিৎসা নিতে দৈনিক খরচ হয় মাত্র সাড়ে ৬০০ টাকা, যেখানে বেসরকারি হাসপাতালে এই খরচ ৪০ থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। সব অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও জায়গা থাকলেও শুধু জনবল ও কার্যকর পরিকল্পনার অভাবে এই সেবা থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। করোনা ছাড়াও আইসিইউ বেড নানা রোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


এ বিষয়ে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির জানান, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন। জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট পুরোদমে চালু করতে অন্তত ১৫ জন জনবল প্রয়োজন। করোনা পরীক্ষার কিটের জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং নতুন করে বয়স্ক ও গাইনী রোগীদের জন্য টিকা সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।


সূত্র: কালের কন্ঠ

২৬ দিন আগে বুধবার, জুলাই ৯, ২০২৫

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন